প্রতিরোধেই মিলবে স্ট্রোকের প্রতিকার

স্ট্রোকের এক-তৃতীয়াংশ অত্যন্ত বিপজ্জনক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ। প্রথম ৪৮ ঘণ্টা ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে, পরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়। ৬০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে স্ট্রোক মৃত্যুর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ। বিশ্বে প্রতি ছয়জনে একজন এবং প্রতি ছয় সেকেন্ডে কোথাও না-কোথাও কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে প্রায় ৬০ লাখ মানুষ স্ট্রোকে মারা যায় এবং এই সংখ্যা এইডস, ম্যালেরিয়া ও টিবির সম্মিলিত মৃত্যুর সংখ্যা থেকেও বেশি।


স্ট্রোক কী?
স্ট্রোককে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাকসিডেন্ট বলা হয়। সেরিব্রাল অর্থাৎ মস্তিষ্ক, ভাসকুলার অর্থ রক্তনালি এবং অ্যাকসিডেন্ট মানে দুর্ঘটনা। সুতরাং মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালির দুর্ঘটনাকেই স্ট্রোক বলা যায়। আমাদের দেশে প্রচলিত একটি ধারণা আছে যে স্ট্রোক একটি হূৎপিণ্ডের রোগ, বাস্তবে এ কথা মোটেই সত্য নয়। স্ট্রোক সম্পূর্ণই মস্তিষ্কের রক্তনালির জটিলতাজনিত রোগ।

স্ট্রোকের ১০ কারণ?
উচ্চরক্তচাপ ও অনিয়মিতভাবে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ সেবন স্ট্রোকের সব থেকে বড় কারণ—
 ধূমপান, জর্দা, তামাক বা গুল সেবন।
 অতিরিক্ত টেনশন বা মানসিক চাপে থাকা।
 হূদেরাগ, যেমন—হার্ট অ্যাটাক, এট্রিয়াল ফিব্রিলেশন, ভাল্ব প্রতিস্থাপন, হার্টে জন্মগত ছিদ্র।
 অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস।
 স্ট্রোকের পারিবারিক ইতিহাস, পুরুষ এবং বয়স্কদের অধিক মাত্রায় ঝুঁকি দেখা যায়।
 রক্তে বেশি মাত্রায় চর্বি, অতিরিক্ত মোটা হওয়া, অতিরিক্ত মাত্রায় কোমল পানীয় গ্রহণ।
 কেউ কেউ জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়িকেও এর কারণ হিসেবে অভিহিত করেন। প্রসবকালীন একলাম্পশিয়া নামের জটিলতা হলে স্ট্রোকের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
 কিছু কিছু ওষুধ বা রোগের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমে যেতে পারে, যেমন—অ্যাসপিরিন, ক্লপিডগ্রেল প্রভৃতি ব্যবহারে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে।
 মাদক সেবনকারীর রক্তক্ষরণের হার বেশি দেখা যায়।
স্ট্রোকের এক-তৃতীয়াংশ অত্যন্ত বিপজ্জনক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে মৃত্যুর হার ৫০ শতাংশ। প্রথম ৪৮ ঘণ্টা ধীরে ধীরে রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে, পরে রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়ে যায়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এসব রক্ত এক-দুই মাসের ভেতর শুকিয়ে যায়। মস্তিষ্কের অনেকখানি জায়গাজুড়ে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে রোগী শুরুতেই মারা যেতে পারে। স্ট্রোকের পাশাপাশি হূৎপিণ্ড বা ঘাড়ের রক্তনালি বন্ধ থাকলে পরবর্তী এক বছরের ভেতর ৫ থেকে ১৫ শতাংশ রোগীর আবার স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
স্বল্পমাত্রার স্ট্রোকের রোগী ২৪ ঘণ্টার ভেতর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে যায়।

প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসমূহ
কিছু রুটিন পরীক্ষার পাশাপাশি সব রোগীর জন্য অবশ্যই সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করতে হবে। রক্তক্ষরণ হলে সিটি স্ক্যানে সাদা দেখায় আর রক্ত সরবরাহ কমে গেলে সিটি স্ক্যানে সেই জায়গা কালো দেখা যায়। আক্রান্ত জায়গার চারপাশে পানি জমে ইডিমা হলে কালো দেখায়। এই ইডিমা চারপাশের মস্তিষ্কের ওপর আরও বেশি চাপ দেয়। ইস্কেমিক স্ট্রোকের প্রথম ছয় ঘণ্টাকে হাইপার একিউট বলা যায়। এ সময়ে বেশ কিছুসংখ্যক রোগীর সিটি স্ক্যানে কিছু সমস্যা পওয়া যায় না, সেসব ক্ষেত্রে পুনরায় স্ক্যান করতে হয়। এমআরআই (ডিডব্লিউআই) করে স্ট্রোক ও তার চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা পাওয়া যায়। ঘাড়ের রক্তনালিতে কোনো ব্লক আছে কি না জানার জন্য ঘাড়ের রক্তনালির ডপলার, হার্টের সমস্যার জন্য ইকো পরীক্ষা করা উচিত। রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা পরীক্ষা করে নিতে হবে। প্রয়োজনে এনজিওগ্রাম পরীক্ষাও করতে হবে। এ ছাড়া রক্তের চর্বির পরিমাণ, রক্তের গ্লুকোজ, স্ট্রোকের প্রবণতা বোঝার জন্য কিছু মার্কার দেখা যেতে পারে।
স্ট্রোকে সাধারণত ব্রেনের নিচের দিকের ব্যাজাল গ্যাংলিয়া এবং থ্যালামাস নামক জায়গা বেশি আক্রান্ত হয়, বাকি মস্তিষ্কে যেকোনো জায়গায়ই স্ট্রোক হতে পারে। ব্রেনস্টেমের স্ট্রোক সর্বাধিক বিপজ্জনক, কারণ ব্রেন স্টেমে শ্বাস-প্রশ্বাস, হূৎপিণ্ডের চলাচল ও জ্ঞানরক্ষার কেন্দ্র অবস্থিত।

হঠাৎ স্ট্রোক হলে?
 রোগীকে কাত করে শুইয়ে দেবেন।
 এ অবস্থায় কোনো খাবার বা ওষুধ মুখে দেবেন না। কারণ, এগুলো শ্বাসনালিতে ঢুকে আরও ক্ষতি করে।
 বরং মুখে জমে থাকা লালা, বমি সুন্দর করে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
 টাইট জামা কাপড় ঢিলা করে দিন।
 হাসপাতালে যাওয়ার সময় খেয়াল করে রোগীর আগের চিকিৎসার ফাইল সঙ্গে
নিয়ে নিন।

কেন অতিসত্বর চিকিৎসা করাতে হবে?
স্ট্রোক হলে আক্রান্ত এলাকার মস্তিষ্ক কোষের বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন প্রভৃতি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। রক্ত সরবরাহ দুই মিনিটের বেশি বন্ধ থাকলে স্নায়ুকোষ স্থায়ীভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আক্রান্ত এলাকার চারদিকে একটি প্রচ্ছায়া বলয়ের সৃষ্টি হয়, দ্রুত চিকিৎসায় প্রচ্ছায়া বলয়কে রক্ষা করা সম্ভব হয়।

স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে তিন হ্যাঁ আর দুই না বলে এক হাতের পাঁচ আঙুল তুলে ধরি—
হ্যাঁ বলুন
 নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে (কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটবেন)। ব্যায়াম করে কয়েক কেজি বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলা যাক।
 যেকোনো পরিবেশে হাসিখুশি থাকুন
 দুশ্চিন্তা দূরে সরিয়ে রাখুন।
ইচ্ছামতো খাওয়া যাবে
 শাকসবজি
 অল্প ভাত
 পাঙাশ, চিংড়ি, কাঁকড়া বাদে যেকোনো মাছ
 বাচ্চা মুরগি
 ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন।
না বলুন
 ধূমপান, জর্দা, তামাক বা গুলকে না বলুন।
খাওয়া যাবে না—
 চর্বি (তেলযুক্ত খাবার) ও শর্করা (মিষ্টি খাবার)-যুক্ত খাবারকে অপছন্দ করুন।
 ফাস্টফুড, বাদাম
 সন্দেশ, রসগোল্লাজাতীয় মিষ্টি।
 দুধ, ঘি, পোলাও, বিরিয়ানি
 পাঙাশ, চিংড়ি, কাঁকড়া
 গরু বা খাসির মাংস
 নারকেল বা নারকেলযুক্ত খাবার
 ডিমের কুসুম প্রভৃতি রসনাযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়।

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত এ ধরনের আরও অসংখ্য ফিচার দেখতে এখানে একবার ঢু মারতে পারেন
৭ টি মন্তব্য
mdmazarulislamসৈয়দ মাজারুল ইসলাম(রুবেল)০৬ জানুয়ারি ২০১৩, ১৮:৫৭
ধন্যবাদ সর্তকতামূলক পোস্টের জন্য।
shahidulhaque77শাহিদুল হক০৬ জানুয়ারি ২০১৩, ১৮:৫৯
ধন্যবাদ আর শুভকামনা রইল।
jamalhossainsজামাল হোসেন সেলিম০৬ জানুয়ারি ২০১৩, ১৯:০৪
জীবন রক্ষাকারী অতি প্রয়োজনীয় একটি পোষ্ট যা লেখক সহজ ভাষায় আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। অনেক অজানা তথ্য জানলাম এবং বুঝতে পারলাম। ধন্যবাদ কবির ৭৭৭।
fardoushaফেরদৌসা০৬ জানুয়ারি ২০১৩, ১৯:৫১
অনেক কিছুই জানা হল। 

কিন্তু আমি যা কিছু হালাল সব কিছুই খায় এবং খাব।
bonofolএইচ এম শরীফ উল্লাহ০৬ জানুয়ারি ২০১৩, ২০:৫১
হুম! বুঝবার পারছি! রসনা বিলাসী তাই
bonofolএইচ এম শরীফ উল্লাহ০৬ জানুয়ারি ২০১৩, ২০:৫১
ধন্যবাদ প্রয়োনীয় পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
শুভেচ্ছা।
bonofolএইচ এম শরীফ উল্লাহ০৬ জানুয়ারি ২০১৩, ২০:৫২
ধন্যবাদ প্রয়োজনীয় পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য।
শুভেচ্ছা জানবেন।

সীমান্তহত্যায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাফাই গাইলেও প্রতিবাদ করলেন মমতা

স্টাফ রিপোর্টার
« আগের সংবাদ
6
পরের সংবাদ»
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর ‘আত্মরক্ষার প্রয়োজনে’ সীমান্তে গুলি চালানোর অনুমতি দিয়ে এলেও বিএসএফের বর্বরতার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি।
বর্বর বিএসএফ শুধু নির্বিচারে নিরপরাধ বাংলাদেশীদেরই হত্যা করে করে না, মূলত ঘুষ দিতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে অনেক ভারতীয় নাগরিকও এই বাহিনীর হাতে মারা যায়। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের হিসাবে, ২০১২ সালে বিসএফের হাতে অন্তত ৪৮ বাংলাদেশী নাগরিক নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে এই সময়ে বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
আমাদের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, বিএসএফের গুলিতে পশ্চিমবঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে তা বন্ধের দাবিতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে একটি প্রতিবাদপত্র পাঠাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী বিএসএফকে এ ধরনের হত্যাকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে এবং এই বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ জানাবেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে রয়েছে বিএসএফ।
নতুন বছরের প্রথম দু’দিনে বিএসএফের গুলিতে চার বাংলাদেশী নিহত হওয়ার পর গত বুধবার সাংবাদিকদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, তার ভারত সফরে কেবল ‘আত্মরক্ষার প্রয়োজনে’ দুই সীমান্ত বাহিনীকে গুলি করার বিষয়ে নীতিগতভাবে মতৈক্য হয়েছে। তার ভাষায়, ‘গত মাসে ভারতে গিয়ে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে একমত হয়েছি।’ তিনি একই সঙ্গে বলেন, ‘কোনো পক্ষ থেকেই গুলি চালাবে না, যদি না আত্মরক্ষার প্রয়োজন হয়।’
তবে দেশের শীর্ষস্থানীয় মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান গত বৃহস্পতিবার বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে বলেছেন, বিএসএফের হাতে নিরস্ত্র বাংলাদেশীরাই নিহত হয়ে থাকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দু’দেশের সীমান্তরক্ষীদের গুলি চালানোর ব্যাপারে একমত হলেও একের পর এক নিরীহ বাংলাদেশী মারা যাচ্ছে শুধুই বিএসএফের গুলিতে। বিজিবির গুলিতে ভারতীয় নাগরিকের মৃত্যুর ঘটনা একেবারেই বিরল।
সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনা হবে বলে ভারত বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও পরিসংখ্যান বলছে সাম্প্রতিক সময়ে হতাহতের ঘটনা বেড়েই চলেছে। আওয়ামী লীগ ঘেঁষা মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র গত ৩১ ডিসেম্বর জানায়, ২০১২ সালে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক ৩১৯টি নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, আগের বছর এই সংখ্যা ছিল ১৫৫টি। ২০১২ সালে ৪৮ জন নিহত হওয়া ছাড়াও ১০৬ জন আহত এবং ১৪০ জন অপহৃত হন বলে মানবাধিকার সংগঠনটি জানায়।
বিদায়ী বছরে গুলি ছোড়ার পাশাপাশি হাতবোমা নিক্ষেপ, ঘরে ঢুকে নির্যাতন, গাছে ঝুলিয়ে পেটানো, বেয়নেটে খুঁচিয়ে জখম, হাত-পা ভেঙে দেয়া, উলঙ্গ করে পেটানো, কুপিয়ে হত্যার মতো ঘটনা ঘটিয়ে বিএসএফ নির্যাতনের নতুন মাত্রা যোগ করেছে বলে মন্তব্য করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র।

নিত্যপণ্যের দাম ৪ বছরে তিনগুণ

কাজী জেবেল
« আগের সংবাদ
46
পরের সংবাদ»
নিত্যপণ্যের আকাশচুম্বী দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের চার বছরে বিভিন্ন পণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। ঈদসহ বিভিন্ন উত্সবে বাজারে পণ্যমূল্য আকস্মিকভাবে বাড়া ছাড়াও বেশি ব্যবহার করা পণ্যগুলোর দাম কয়েক দফায় বেড়েছে। খাদ্যপণ্যের পাশাপাশি খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দাম বেশি বেড়েছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন কোম্পানি ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়েছে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক গুণ বেড়ে গেছে। এ সময়ে বাড়িভাড়া, পরিবহন, শিক্ষা ও অন্যান্য ব্যয় কয়েকগুণ বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে টিসিবিকে কার্যকর না করা, বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়া, সিন্ডিকেট কারসাজি, পণ্য সরবরাহ কম থাকা, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিসহ আরেক কয়েকটি কারণকে দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ইশতেহারে নিত্যপণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়ানোর স্লোগান দিয়েছিলেন।
নির্বাচনের ইশতেহারে অগ্রাধিকারভিত্তিক পদক্ষেপ তালিকায় দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি ছিল প্রথম স্থানে। ইশতেহারের ১.১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘দ্রব্যমূল্যের দুঃসহ চাপ প্রশমনের লক্ষ্যে চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমিয়ে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখার ব্যবস্থা করা হবে। দেশজ উত্পাদন বৃদ্ধিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সময়মতো আমদানির সুবন্দোবস্ত, বাজার পর্যবেক্ষণসহ বহুমুখী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। মজুতদারি ও মুনাফাখোরি সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়া হবে, চাঁদাবাজি বন্ধ করা হবে। ‘ভোক্তাদের স্বার্থে ভোগ্যপণ্য মূল্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ গড়ে তোলা হবে। সর্বোপরি সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য সৃষ্টি করে দ্রব্যমূল্য কমানো হবে ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে।’
সরকারের চার বছর মেয়াদের শেষে এসে দেখা যাচ্ছে, খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়ায় জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। জীবনধারণের জন্য যেটুকু প্রয়োজন, তা মেটাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। বিলাসী সামগ্রীর ব্যবহার প্রায় ভুলতে বসেছেন। আয়ের সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে নিত্য কাটছাঁট করতে হচ্ছে খাদ্যতালিকা। যদিও সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে বলেছেন, দেশের মানুষ ভালো আছে, দিনে চার-পাঁচ বেলা খাচ্ছে। অপরদিকে জাতীয় সংসদে কয়েকটি পণ্যের দাম বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার তথ্য দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
এদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে। মহাজোট সরকারের চার বছরে মূল্যস্ফীতির হার প্রায়ই ওঠা-নামা করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের মাস। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী ২০০৯-১০ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। ২০১০-১১ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে তা ছিল ৮ দশমিক ৬৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের নভেম্বরে মূল্যস্ফীতির হার ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিগত ২০ বছরের মধ্যে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের জরুরি সরকারের শাসনামলে (২০০৭-২০০৮) খাদ্যদ্রব্যের দাম খুব বেড়ে গিয়েছিল। সাধারণ মানুষ আশা করেছিল, নির্বাচিত সরকারের আমলে নিত্যপণ্যের দাম কমে আসবে। কিন্তু বাস্তবে তার উল্টো ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগের চার বছরে চালের দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও চিনি, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছিল। বাজারে কয়েক দফায় চিনি ও তেলের সঙ্কটের পর দাম বেড়ে গিয়েছিল। পরে বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হলেও দাম তেমন একটা কমেনি। বরং ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী সরকার নতিস্বীকার করে চিনি ও তেলের দাম দফায় দফায় বাড়িয়ে দিয়েছে। খাদ্য অধিদফতর ভর্তুকির চাল ও আটা ওএমএসের মাধ্যমে কম দামে বিক্রি করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। আলোচিত-সমালোচিত ফারুক খানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেয়া হলেও খাদ্যদ্রব্যের দাম কমতে দেখা যায়নি, বরং বিভিন্ন অজুহাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে।
তুলনামূলক দাম : গত ২৮ অক্টোবরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার। বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, প্রায় সবক’টি পণ্যের দাম বেড়েছে। কোনো কোনো পণ্যের দাম দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেড়েছে। টিসিবির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের দিন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি এক হালি মুরগির ডিমের দাম ছিল ২৩ থেকে ২৫ টাকা। চার বছরের ব্যবধানে একই ডিমের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা। অর্থাত্ প্রতি হালিতে ডিমের দাম বেড়েছে ১৫ টাকা। একইভাবে ১৪-২০ টাকার লবণ বিক্রি হচ্ছে ১৮-৩০ টাকায়, অর্থাত্ প্রতি কেজি লবণে ৪-১০ টাকা বেড়েছে। ২৩-২৫ টাকার খোলা আটার দাম চার বছরের ব্যবধানে ৩৫-৩৬ টাকা, ৩২-৩৮ টাকার ময়দা বেড়ে ৪২-৪৮ টাকা, খোলা সয়াবিন ৮৮-৯৪ টাকা থেকে বেড়ে ১১০-১১২ টাকা এবং মানভেদে ৭৬ থেকে ১০৫ টাকার মসুর ডালের দাম বেড়ে ১৪২ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ২০০৯ সালে অন্যান্য পণ্যের মধ্যে প্রতি কেজি ভালো মানের নাজির/মিনিকেট ৩৩-৩৮ টাকা, সাধারণ মানের নাজির/মিনিকেট ৩৩-৩৮, ভালো মানের পাইজাম/লতা চাল ৩৩-৩৪ ও সাধারণ মানের পাইজাম/লতা চাল ৩২-৩৩, মোটা চাল স্বর্ণা/চায়না ২৯-২৯, মসুর ডাল ৭৬-১০৫, ছোলা ৩৫-৪০, পেঁয়াজ ৩০-৩৬, রসুন ২৪-৩২, শুকনা মরিচ ৯০-১১০, হলুদ ৯৫-১১০, গরুর মাংস ২১০-২২০ ও খাসির মাংস ৩২০-৩৪০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
সরকারের চার বছর পূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর খুচরা বাজারগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সব পণ্য বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ানবাজারে তুলনামূলক কম দামে পণ্য বিক্রি হয়। পাশাপাশি পাইকারি ও খুচরা বাজার থাকায় এখানে কম দামে পণ্য বিক্রি করতে পারেন ব্যবসায়ীরা। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ শাসনামলের চার বছরেই খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়েছে। টিসিবি তথ্য অনুযায়ী, গতকাল এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৩০-১৩৫ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১১০-১১২, খোলা পাম তেল ৭২-৭৪, ভালো মানের নাজিরশাইল ৪৬-৪৮, সাধারণ মানের নাজিরশাইল ৩৪-৪৫ ও মোটা চাল স্বর্ণা ৩২-৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য পণ্যও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খোলা আটা ৩৫-৪০ টাকা, প্যাকেটজাত আটা ৩৮-৪০, খোলা ময়দা ৪২-৪৪, প্যাকেটজাত ময়দা ৪৬-৪৮, চিনি ৫০, ভালো মানের মসুর ডাল ১৩৮-১৪০, মুগ ডাল ১০০-১১৫ ও দেশি পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। টিসিবির প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী গত এক সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগির দাম ১৫ টাকা বেড়ে ১৫০-১৫৫ টাকা, আদা (মানভেদে) ১০ টাকা বেড়ে ৬০-৭০, ডিম ২ টাকা বেড়ে ৩৮-৪০, খোলা আটা ২ টাকা বেড়ে ৩৫-৩৬, প্যাকেট আটা ২ টাকা বেড়ে ৩৮-৪০ ও আলু ৩ টাকা বেড়ে ২৮-৩০ টাকা হয়েছে।
বিএনপি ও আ’লীগের শাসনামলে তুলনামূলক বাজারদর : বিএনপি শাসনামলের শেষ বছর ২০০৬ সাল ও আওয়ামী লীগ সরকারের গতকালের টিসিবির প্রকাশিত তথ্য ও বাজার দর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে। বিএনপি সরকারের শেষ সময়ে মোটা চালের কেজি ছিল ১৭ টাকা। সেই চাল শত ভাগ দাম বেড়ে এখন ৩০-৩২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইভাবে ২৪ টাকার নাজিরশাইল বেড়ে গতকাল ৪৬-৪৮ টাকা দরে বিক্রি হয়ে। বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার সময় চিনির কেজি ছিল ৩৭ টাকা। বর্তমান তা বিক্রি হচ্ছে ৫২-৫৮ টাকায়। এর আগে চিনি ৬৫-৬৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বিএনপি খোলা সয়াবিন তেল ৪৮ টাকা রেখে গিয়েছিল। বর্তমানে প্রায় তিন গুণ বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকা। একইভাবে ১৮ টাকা কেজির আটা দ্বিগুণ বেড়ে ৩৫-৪০ টাকা ও আমদানি করা নেপালি মসুর ডাল ৪৫ টাকার পরিবর্তে তিন গুণের বেশি বেড়ে ১৪০-১৪২ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। বিএনপির আমলে আমদানি করা প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হতো ২০ টাকায়। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা। একইভাবে অন্যান্য পণ্যের দামও বেড়েছে।
দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার নেপথ্যে : দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে অর্থনীতিবিদরা বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের চরম ব্যর্থতা, সিন্ডিকেট, দুর্নীতি, অনিয়ম, ভ্রান্ত নীতি অবলম্বন, যথাযথ বাজার মনিটরিং না করা, সরকারি দলের মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা সরাসরি ব্যবসা করায় তাদের ওপর সরকারের হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হওয়া, জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধিসহ বেশকিছু কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়েছে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, বাজার তদারকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। সাবেক বাণিজমন্ত্রী ফারুক খান বাজার তদারকে নিজেই বাজারে গেলেও তাতে কাজ হয়নি। সরকারের তিন বছরে সয়াবিন তেলের বাজার ছিল সব সময়ই অস্থির। আটা-ময়দার দর ছিল নিয়ন্ত্রণহীন, বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় চিনি, চালের বাজারও ছিল চড়া। সরকার ক্ষমতা নেয়ার ছয় মাসের মাথায় কাঁচামরিচের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকায় দাঁড়ায়। বর্তমানে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা। গত রোজার ঈদের আগে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছিল। তখন প্রতি কেজি ছোলা ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়। বিভিন্ন জাতীয় ও ধর্মীয় উত্সবে বাজার চলে গেছে সিন্ডিকেটের কবলে। লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে নিত্যপণ্যের দাম। অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত ২০১০ সালের আগস্টে একটি বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, দায়িত্ব নেয়ার পর আমি সিন্ডিকেট ভাঙার ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ দুঃখের সঙ্গে বলছি, সিন্ডিকেট আমরা ভাঙতে পারিনি। সিন্ডিকেট ভাঙা কঠিন। আসলে সংসদীয় গণতন্ত্রে সমস্যা এখানেই। বিত্তশালীরা সরকারের ভেতরে ঢুকে প্রভাব বিস্তার করে।
দাম বাড়ার কারণ বলতে গিয়ে ক্যাবের সভাপতি কাজী ফারুক আমার দেশকে বলেন, দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে যে ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার, তা নিতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেট। বর্তমান মহাজোট সরকারের দুই-তৃতীয়াংশ সংসদ সদস্য কোনো না কোনোভাবে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। দাম বাড়ার নেপথ্যে এসব সংসদ সদস্যদেরও ভূমিকা থাকার সম্ভাবনা প্রবল। এছাড়া একশ্রেণীর ব্যবসায়ী ভোক্তাদের জিম্মি করে রেখেছে। তাদের অতি মুনাফা করার প্রবণতা বাজারকে অস্থির করে তুলেছে। সরকার তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। তিনি দুর্বৃত্ত ব্যবসায়ীদের মনিটরিং করে শাস্তির আওতায় আনার পরামর্শ দেন।
টিসিবির ব্যর্থতা : বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারের বড় হাতিয়ার টিসিবি। সিন্ডিকেট ভাঙা ও পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কটে টিসিবি বড় ভূমিকা রাখে। অথচ সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে টিসিবি। পণ্য আমদানি, ডিলার নিয়োগসহ সবকিছু দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে জিম্মি। ফলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও টিসিবি নিষ্ক্র্রিয় ছিল। সরকারের তরফ থেকে টিসিবিকে শক্তিশালী করার কথা বললেও বাস্তবে তা হয়নি। বিশেষ করে রোজার সময় টিসিবি নিয়ে অনেক আশাবাদ প্রকাশ করলেও কার্যত বাজারে প্রতিষ্ঠানটির কোনো প্রভাব নেই। ভোজ্যতেল, চিনি ও ডালের মতো কিছু পণ্য স্থানীয় বাজার থেকে সংগ্রহ করলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় সামান্য। দুই থেকে সর্বোচ্চ সাত দিনের চাহিদা মেটানোর মতো পণ্য বাজারে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি।

মন্তব্য প্রতিবেদন : মান-মর্যাদা আর রইল না

মাহমুদুর রহমান
     
57
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ডাকে এবং বিএনপির নৈতিক সমর্থনে দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালিত হয়েছে। মহাজোট সরকারের চার বছরের ডজন খানেক হরতালের মধ্যে এটাই সবচেয়ে সহিংস ছিল। অবশ্য এই সপ্তাহের অবরোধে আরও রক্ত ঝরেছে। তবে আজকের লেখায় অবরোধ প্রসঙ্গ বাদ রাখছি। হরতালকারীদের পিকেটিংয়ে স্বতঃস্ফূর্ততা এবং অধিক মাত্রায় অংশগ্রহণের কারণেও জামায়াতের হরতালটি ভিন্ন মাত্রা লাভ করেছে। দু’ সপ্তাহ আগে লেখা ‘দেয়াল লিখন পড়ুন’ শিরোনামের মন্তব্য প্রতিবেদনে জামায়াত এবং শিবির কর্মীদের দলীয় আদর্শের প্রতি আনুগত্য এবং লড়াকু মনোভাবের প্রশংসা করেছিলাম। হরতালের দিনে পুলিশ ও সরকারি ক্যাডার বাহিনীর যৌথ হামলা প্রতিরোধে জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের সাহস করে রাজপথে অবস্থান ধরে রাখার দৃশ্য এখন সর্বত্র আলোচনার বিষয়। হরতাল ডেকে ঘরে বসে কিংবা মোবাইল বন্ধ করে নিরাপদ দূরত্বে থাকার ভীরুতার বিপরীতে সাহসের এই প্রদর্শনী ফ্যাসিস্ট সরকারের লাঠিয়াল প্রশাসনকে দৃশ্যতই বিচলিত করে তুলেছে। সেই হরতালের রাতে বাংলাভিশনের টক শোতে এই মুহূর্তে সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘টকশো স্টার’ নিউ-এজ সম্পাদক নুরুল কবির এসেছিলেন। আলট্রা-সেক্যুলার এই সম্পাদক কট্টর জামায়াত-বিরোধী হয়েও সে রাতে দেশব্যাপী হরতালের সফলতা স্বীকার করে নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ক্রমবর্ধমান সাংগঠনিক সক্ষমতায় তার বামপন্থী অবস্থান থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো দিনাজপুরে একজন শিবির কর্মীর অমূল্য প্রাণ এবং হাজারের ওপর কর্মী-সমর্থকদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনের বিনিময়ে প্রাপ্ত সারাদিনের রাজনৈতিক সফলতা জামায়াত নেতৃবৃন্দ রাতে অপ্রত্যাশিতভাবে বিদেশি মনিবের পদতলে বিসর্জন দিয়েছেন। ঘটনাটি এ রকম।
সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় মার্কিন দূতাবাসের একটি গাড়ি পিকেটারদের সামনে পড়লে তারা গাড়ি লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। চালক গাড়িটি দ্রুত চালিয়ে নিতে সক্ষম হলেও জানালার কাঁচ ভেঙে যায় এবং চালকও সামান্য আহত হয়। একটি চলন্ত গাড়িকে মার্কিন দূতাবাসের বলে চেনা নিশ্চয়ই পিকেটারদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। সুতরাং, এখানে বিশেষভাবে মার্কিন-বিরোধী কোনো মনোভাব প্রকাশ পাওয়ার সুযোগও ছিল না। কিন্তু, তা সত্ত্বেও ভীত-সন্ত্রস্ত জামায়াতে ইসলামী, রীতিমত আনুষ্ঠানিক বিবৃতি প্রকাশের মাধ্যমে ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে। সেই বিবৃতিতে ঘটনার দায়দায়িত্ব দলের কাঁধে নিয়ে তারা ক্ষতিপূরণ প্রদানেরও প্রস্তাব দেয়। এখন প্রশ্ন হলো, ওইদিন সারা দেশে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত শ’খানেক গাড়ি অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুরের শিকার হয়েছে। তাহলে কেবল মার্কিন দূতাবাসের গাড়ি ভাংচুরের জন্য জামায়াতে ইসলামীর দুঃখ প্রকাশ এবং ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রস্তাবের পেছনে যৌক্তিকতা কোথায়? শুধু তাই নয়। একটি বিশেষ গাড়ি ভাংচুরের দায় অপ্রয়োজনীয়ভাবে গ্রহণ করে দলীয়ভাবে জামায়াতে ইসলামী হরতালের দিনে সংঘটিত তাবত্ সহিংসতার দায়-দায়িত্ব কি নিজেদের ঘাড়ে নেয়নি? আনুষ্ঠানিক সেই স্বীকারোক্তির সুযোগ নিয়ে সরকার এর মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত আমির এবং সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অন্যান্য গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে গাড়ি ভাংচুরের অপরাধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হলে তাদের পক্ষের আইনজীবীরা মক্কেলকে মুক্ত করতে কী যুক্তির সহায়তা নেবেন সেটা তারাই ভালো জানেন। তবে মার্কিন তোষণের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী যে তাদের আদর্শিক অবস্থান দুর্বল করে ফেলেছে এ বিষয়টি আশা করি, দলটির বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন কর্মী-সমর্থকরা মানবেন। প্রসঙ্গক্রমে অন্য একটি বিষয়ের অবতারণা করছি।
আমার সর্বশেষ মন্তব্য-প্রতিবেদনে মিসরের ইখওয়ানুল মুসলেমিন (মুসলিম ব্রাদারহুড)-এর দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির কিছু সমালোচনা করেছিলাম। সেই সমালোচনায় দলটির নেতা-কর্মী-সমর্থকের একাংশ ব্যথিত হয়ে আমার দেশ পত্রিকা এবং সোনার বাংলাদেশ ওয়েবসাইটে প্রশ্ন আকারে বিভিন্ন মন্তব্য লিখেছেন। ইখওয়ানুল মুসলেমিন এবং জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি অভিন্ন দাবি করে তারা জানতে চেয়েছেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি ভ্রান্ত বলে আমি মন্তব্য করেছি। আমি ধরে নিচ্ছি জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা হাসান-আল-বান্না, সৈয়দ কুতুব এবং জয়নাব গাজ্জালীর বইপত্র আমার চেয়ে অনেক বেশি পড়েছেন। মিসরের ইসলামী দলটির ইতিহাস সম্পর্কেও তাদের জানাশোনা অনেক বেশি। পঞ্চাশ এবং ষাটের দশকে মিসরের এক সময়ের জনপ্রিয় নেতা জামাল আবদেল নাসেরের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ইখওয়ানুল মুসলেমিনের সংগ্রামে পশ্চিমা বিশ্বের এক প্রকার কৌশলগত সমর্থন ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন সমর্থিত নাসের সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত সব গোষ্ঠীকেই ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইলের পশ্চিমা মিত্ররা সে সময় বন্ধু বিবেচনা করত। ‘শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু’ নীতি সবাই সময়-সুযোগ মতো গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু, ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধ (Yom Kippur War) মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের একাধিপত্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের দিকে বন্ধুত্বের হাত প্রসারিত করে। মিসরের প্রেসিডেন্ট সেই সময় ইসরাইল সফর করে সারা বিশ্বকে চমকে দেন এবং দেশবাসীকে তার বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ করে তোলেন। এই ইসরাইল প্রীতির প্রতিক্রিয়ায় পরবর্তী সময়ে সামরিক প্যারেড চলাকালে আনোয়ার সাদাত বিদ্রোহী সেনার গুলিতে নিহত হলে তার উত্তরসূরি হোসনি মোবারক অধিকতর মার্কিন ঘেঁষা নীতি অনুসরণ করেন।
উপর্যুপরি তিন স্বৈরশাসকের পঞ্চাশ বছরেরও অধিক সময়ের শাসনকাল ইখওয়ানুল মুসলেমিনকে নিরন্তর সংগ্রামের মধ্য দিয়েই অতিবাহিত করতে হয়েছে। শত শত নিরাপরাধ নারী-পুরুষকে কেবল ইসলামী আদর্শ ধারণ করার অপরাধে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। এমন সময়ও গেছে, যখন মিসরে প্রকাশ্যে ইখওয়ানুল মুসলেমিন শব্দটি উচ্চারণ করা পর্যন্ত অপরাধ রূপে গণ্য হতো। দলের সদস্যদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে সরকারের ছদ্মবেশী এজেন্টরা সর্বত্র ঘুরে বেড়াত। এত নির্যাতন সত্ত্বেও মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃবৃন্দ কখনই মিসরের জনগণের স্বাধিকারের আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে কোনো অবস্থান গ্রহণ করেননি অথবা নীতি বিসর্জন দিয়ে সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে কোনো আপসরফা করেননি। আদর্শের প্রতি অবিচল থাকার পরিণতিতেই ছয় দশকের দীর্ঘ সংগ্রাম শেষে দলটি গণআন্দোলনের জোয়ারে সম্প্রতি রাষ্ট্রক্ষমতা লাভ করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট মুরসির বিরুদ্ধে মোবারকপন্থীদের আন্দোলন থেকে পরিষ্কার হয়ে উঠেছে যে, মিসরে ইসলামী শক্তির বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন সভ্যতার দেশটিতে আরব বসন্তের জাগরণ স্থায়ী রূপ পেতে হয়তো আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।
অপরদিকে ১৯৭১ সালে জামায়াতে ইসলাম তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে যে পর্বতপ্রমাণ ভুল করেছে আজ তার মূল্য না চুকিয়ে উপায় নেই। পাকিস্তানের জালিম শাসকদের পক্ষাবলম্বন ইসলামের মহান আদর্শের পরিপন্থী কাজ হিসেবে অবশ্যই সবাইকে মানতে হবে। ২৫ মার্চ মধ্যরাতে দখলদার বাহিনী গণহত্যা আরম্ভ করার পর স্বাধীনতা সংগ্রামের বিরোধিতা করার নীতির পক্ষে কোনো যুক্তি প্রদর্শনের সুযোগ নেই। ১৯৮৬ সালে জেনারেল এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ, ১৯৯৬ সালে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে জয়লাভ করাতে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান এবং ২০০৭ সালে সামরিক গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দ্বারা বিভ্রান্ত হওয়াও জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক ভুলের ধারাবাহিক উদাহরণ। আশঙ্কা করছি, গত সপ্তাহের হরতালে মার্কিন দূতাবাসের সামান্য গাড়ি ভাংচুরে নতজানু প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে দলটি পুনরায় ভুলের ফাঁদে পা দিয়েছে। সেক্যুলারের ছদ্মাবরণে একটি ইসলাম বিদ্বেষী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলের রক্ষক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের করুণা ভিক্ষার প্রচেষ্টা কোনো ইসলামী দলের আদর্শের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে পারে না। এই পদক্ষেপ নিয়ে জামায়াতে ইসলামী প্রকৃতপক্ষে সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদ বিরোধী বাংলাদেশের স্বাধীনতাপ্রিয়, প্রকৃত ইসলামপন্থী জনগণের মান-মর্যাদার হানি ঘটিয়েছে। আমার মন্তব্যে দলটির নেতা-কর্মী, সমর্থকরা আবারও আহত বোধ করলেও আমি নাচার। অকপটে সত্য কথা বলার জন্যই মইন-ফখরুদ্দীনের ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদে ২০০৭ সালে অপটু হাতে কলম তুলে নিয়েছিলাম। ক্ষমতাবানদের সঙ্গে আঁতাত না করে চলার জন্য পরিবারসহ আমাকে অনেকভাবে মূল্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। তবু, আদর্শচ্যুত হয়ে নিজের পিঠ বাঁচানোর কৌশল নিতে আমি রাজি নই।
মান-মর্যাদার প্রশ্নে এবারের বিজয়ের মাস নিয়ে খানিক আলোচনা করা যাক। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেয়ার সুবাদে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ নিজেদের বাংলাদেশের মালিক রূপে যে বিবেচনা করে থাকেন সে বিষয়টি সংসদে সরকারি দলের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী স্পষ্ট করেই বলেছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সোল এজেন্সির দাবিদারদের প্রকাশ্যে দেশের মালিকানা দাবি করার বিষয়টি সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। আমি সর্বদাই বলে এসেছি, আওয়ামী লীগ একটি আপাদমস্তক ফ্যাসিবাদী দল। সাজেদা চৌধুরীর বক্তব্যের মাধ্যমে দলটি সম্পর্কে আমার এতদিনের মূল্যায়ন নতুনভাবে প্রমাণিত হয়েছে। গত সাতদিন ধরে টেলিভিশনে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এবং দলীয় বুদ্ধিজীবীকুলের কাছ থেকে নানারকম জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য শোনার সৌভাগ্য হয়েছে। তাদের বক্তব্যে একটি লক্ষণীয় মিল খুঁজে পেয়েছি। সবাই একবাক্যে বলেছেন, বিজয়ের মাসে হরতাল আহ্বান করে জামায়াতে ইসলাম রীতিমত কবিরা গোনাহ্ করে ফেলেছে। দেশের স্বঘোষিত মালিকরা তাদের জীবিত রেখেছে এতেই জামায়াতে ইসলামীর কোটির অধিক কর্মী-সমর্থকের কৃতার্থ থাকা উচিত। বিজয়ের মাসে সেই দলের হরতাল ডাকার ধৃষ্টতায় আওয়ামী মহলের সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেছে। মিরপুরে পুলিশ প্রহরায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের বীর পুঙ্গবদের শিবির কর্মীদের গণপিটুনি দেয়ার দৃশ্য থেকেও তাদের ক্রোধের মাত্রা বেশ বোঝা গেছে। টেলিভিশনে সেদিনের দৃশ্য ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠার তাণ্ডবের দৃশ্য স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল। বিএনপির গত রোববারের অবরোধের দিনেও আওয়ামী ক্যাডারদের একই ভূমিকায় দেখা গেছে। এখানে উল্লেখ্য, ১৯৯৫ সালে এই বিজয়ের মাসেই জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র ধারক-বাহকের দাবিদার আওয়ামী লীগ ৭২ ঘণ্টার লাগাতার হরতাল দিয়েছিল। তবে কীনা শ্রীকৃষ্ণের জন্য যেটা লীলাখেলা, আমজনতার জন্য সেটাই গুরুতর অপরাধ। জামায়াতে ইসলামীকে মোকাবেলার কৌশল পাল্টে আওয়ামী লীগ তাদের এক সময়ের তাবত্ বি-টিমকে এবার মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ১৯৭৫ সালের ফ্যাসিস্ট বাকশালের সঙ্গী-সাথীরা সবাই অবশেষে ঘোমটা খুলে একজোট হচ্ছেন। এদেরকে লক্ষ্য করেই বিশিষ্ট সমাজচিন্তক ও বাম রাজনীতির তাত্ত্বিক বদরুদ্দিন উমর বাকশালের গর্ভে জন্ম নেয়ার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি নিয়ে বাকশালের সব প্রেতাত্মা আগামী ১৮ তারিখে হরতালের ডাক দিয়েছে। যাই হোক, ১৬ কোটি মানুষের মাতৃভূমির স্বঘোষিত মালিক-মোক্তাররা বিজয়ের মাসে দেশবাসীর জন্য কী কী প্রকার উপহারের বন্দোবস্ত রেখেছেন জাতির মান-মর্যাদাবিষয়ক আলোচনায় তার দিকে খানিক দৃষ্টিপাত করি।
এ মাসের ৫ তারিখে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল ২০১২ সালের বিশ্ব দুর্নীতির ধারণা সূচক প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের গত এক বছরে দুর্নীতির ভয়াবহ বিস্তারের ফলে প্রত্যাশিতভাবেই আমাদের অবস্থানের ২৪ ধাপ অবনমন ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে পেরেছি। আফগানিস্তানসহ এ অঞ্চলের সাতটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ছাড়া কেবল পাকিস্তানের ৫ ধাপ অবনতি হয়েছে। শুধু তাই নয়। দুর্নীতির হিসাব কষার যে স্কোর পদ্ধতি রয়েছে তাতেও আমরা গত বছরের তুলনায় ১ নম্বর কম পেয়েছি। পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র দখলদার ন্যাটো সেনাবাহিনী কবলিত আফগানিস্তান ছাড়া আর কোনো দেশেরই স্কোর অন্তত কমেনি। এ বছর ১০০ নম্বরের মধ্যে আমরা পেয়েছি সাকুল্যে ২৬। কথিত সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতির কল্যাণে দেশে গোল্ডেন জিপিএ এবং জিপিএ-৫ এর ছড়াছড়ি চললেও দুর্নীতির পরীক্ষায় আমাদের অবস্থা ‘এফ’ অর্থাত্ ফেলের চেয়েও খারাপ। দুর্নীতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় চ্যাম্পিয়নশিপ করায়ত্ত করার পর বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের তকমা পুনরুদ্ধার করতেও আর বোধহয় খুব বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে না। এই অপমানের মনোবেদনা কমানোর ব্যর্থ চেষ্টায় একটা হালকা গল্প বলি। যেসব পাঠক গল্পটি জানেন নিজ গুণে লেখককে ক্ষমা করবেন। বার্ষিক পরীক্ষায় ফল প্রকাশের দিনে ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বাসায় ফিরেছে। পিতা অবস্থা বুঝতে পেরে গম্ভীর মুখে বললেন, ‘কী ফেল করেছো তো?’ ছেলের কান্না আরও বেড়ে গেল। কোনোক্রমে জবাব দিল, ‘ফেল করলে তো ভালোই ছিল, আমাকে আরও এক ক্লাস নিচে নামিয়ে দিয়েছে।’ আমাদের অবস্থাও ওই ফেল করা ছেলের মতোই। সর্বব্যাপী অবক্ষয়ে জাতি হিসেবে আর কত নিচে নামতে হবে তারই হদিস করতে পারছি না। দুর্নীতির আলোচনায় ফিরে আসি।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কর্তৃক বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি সূচক প্রকাশিত হওয়ার দিনটিতে পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি তদন্তে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। মন্ত্রী পর্যায়ের প্রমাণিত দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের নিয়ে দুদকের সঙ্গে মতান্তর ঘটায় সে রাতেই তারা অত্যন্ত রুষ্ট হয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে গেছেন। দুদক কর্তৃক নিয়োজিত অনুসন্ধান টিম সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেন এবং প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় নিক্সন চৌধুরীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিলেও উপরের চাপে দুদক চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়কে বাদ দিয়ে মামলা করার প্রস্তাব করেন। সঙ্গত কারণেই উপর মহলের দুর্নীতিকে উত্সাহ প্রদানকারী এই অন্যায় প্রস্তাবে বিশ্বব্যাংক সম্মত হয়নি। আলোচনা ভেঙে যাওয়ার পর দুদক কার্যালয় ত্যাগের আগে বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) সাবেক চিফ প্রসিকিউটর লুই গাব্রিয়েল মোরেনো ওকাম্পো দৃশ্যত বিরক্তির সঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, আর কিছু বলার নেই, আমরা বিমানবন্দরে যাচ্ছি। আর স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ্ঞাবহ দুদক চেয়ারম্যান গোলাম রহমান মন্তব্য করেন, ‘মামলা বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী হবে, অনুসন্ধান কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটা পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে। এতে কিছুদিন সময় লাগলে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।’ এই ঘটনায় মহাভারত অশুদ্ধ না হলেও দক্ষিণের মানুষের অনেক স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পের কফিনে শেষ পেরেক যে মারা হয়ে গেল এই সহজ কথাটি মেরুদণ্ডহীন, দলবাজ আমলাটিকে কে বোঝাবে? তাছাড়া মামলা দায়েরের মাধ্যমে জাতির ললাটে দুর্নীতিবাজের সিল খানিকটা হলেও মোছার একটা সুযোগ হাতছাড়া করার দায় সরকারের শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে দুর্নীতি দমন কমিশনকেও গ্রহণ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে ঢাকায় নিযুক্ত বিশ্বব্যাংক প্রধান এক বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছেন যে, দুর্নীতির পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত ব্যতিরেকে তারা পদ্মা সেতুতে আর অর্থায়ন করবেন না। অর্থাত্ দশ মণ ঘিও পুড়বে না, রাধাও নাচবে না। দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তর প্রমাণিত দুর্নীতি প্রসঙ্গে গোলাম রহমান কিছুদিন আগে ঔদ্ধত্যের সঙ্গে মন্তব্য করেছিলেন, পিওন-ড্রাইভারের সাক্ষীতে তো আর মামলা হয় না। মনে প্রশ্ন জাগছে, ক্ষমতার পালাবদল সাপেক্ষে দুদক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে দুর্নীতিতে সহায়তা প্রদান ও দেশের অর্থনৈতিক ক্ষতি করার অভিযোগে মামলা হলে, তার সাক্ষী কারা হবেন? মোদ্দা কথা, শেখ হাসিনা এবারের বিজয়ের মাসকে দুর্নীতির মাসে পরিণত করেছেন।
বাঙালিরা স্বভাবগতভাবেই আবেগপ্রবণ জাতি। প্রতি বছর বিজয়ের মাস এলে আমাদের সেই আবেগ বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো সব পরিমিতিবোধকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। ভাষা আন্দোলনের মাস এবং স্বাধীনতার মাসেও যে কোনো বিদেশি পর্যবেক্ষক বাংলাদেশে এলে একই চিত্র দেখতে পাবেন। আর দল হিসাবে আওয়ামী লীগ তো দেশের মালিকানা দাবি করার পাশাপাশি ফেব্রুয়ারি, মার্চ, আগস্ট এবং ডিসেম্বর এই চার মাস রীতিমত দখল করে বসে আছে। সম্ভব হলে আওয়ামী পন্থীরা চার মাসে সব ভিন্ন মতাবলম্বীর জন্য বাংলাদেশে অবস্থান নিষিদ্ধ করে দিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সোল এজেন্সির দাবিদার সেই দল এবারের বিজয়ের মাসেই দেশের প্রতিটি নাগরিকের মান-মর্যাদা মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। দুর্নীতি সূচকের ভয়াবহ অবনতি ঘটার সংবাদের পাশাপাশি পদ্মা সেতু ডোবানো হয়েছে এই বিজয়ের মাসেই। সুশাসন শিকেয় তুলে কেবল মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের গল্প ফেরি করে দেশ পরিচালনা করার নীতি মেয়াদের শেষ বছরে ক্ষমতাসীনদের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিয়েছে। অবশ্য ষড়যন্ত্র-তত্ত্ব প্রিয় প্রধানমন্ত্রী এখানেও ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করে ফেলতে পারেন। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো শেখ হাসিনার যে কোনো বক্তব্য তা যতই অযৌক্তিক হোক না কেন সমস্বরে তার প্রচারণায় নেমে যাওয়া। আমি একেবারেই অবাক হব না যদি আমাদের অতিকথন প্রিয় প্রধানমন্ত্রী ডিসেম্বর মাসে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন প্রকাশ এবং বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ দলের পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি তদন্তে ঢাকা আগমনের সঙ্গে স্বাধীনতা বিরোধিতা এবং যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচালের প্রচেষ্টার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পান।
লন্ডনের প্রভাবশালী সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘দি ইকোনমিস্ট’ তথাকথিত ‘আন্তর্জাতিক’ ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারপতির টেলিসংলাপের দলিল-দস্তাবেজ জেনে যাওয়ার পর এমনিতেই বাংলাদেশের সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থাই বিশ্ব জনমতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী পুত্রের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের সংবাদ এবং এদেশের বিচার বিভাগের সার্বিক অবক্ষয়ের কাহিনী প্রকাশ করেই আমার দেশ সরকারের রোষানলে পতিত হয়েছিল। পত্রিকার একজন সম্পাদক ও কলামিস্ট হিসেবে সেই ঘটনার ৩ বছর পর মাথা উঁচু করে দাবি করতে পারি যে আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত সব সংবাদ এবং আমার প্রতিটি কলামের বস্তুনিষ্ঠতা আজ প্রমাণিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্রোধে অন্ধ হয়ে আদালত ও প্রশাসনকে ব্যবহার করে আমাদের কন্ঠরোধের যাবতীয় চেষ্টা গ্রহণের পরিবর্তে সেই সময় সততা ও সুশাসনের পথে ফিরে এলে আজ তাকে হয়তো এই বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হতো না। বাংলাদেশের মান-মর্যাদাও অক্ষুণ্ন থাকত। সর্বক্ষণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে যারা মুখে ফেনা তুলে ফেলেন, তাদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অর্থ কোনো ব্যক্তি অথবা দলের স্তাবকে পরিণত হয়ে তাদের পূজা করা নয়। দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন প্রতিষ্ঠা, দল-মত জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব নাগরিকের মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাষ্ট্র পরিচালনা এবং দেশের সম্পদ সাধারণ জনগোষ্ঠীর মাঝে সুষমভাবে বণ্টন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই কেবল মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনার বাস্তবায়ন সম্ভব। বলদর্পী, ক্ষমতান্ধ, দুর্নীতিপরায়ণ মহাজোট সরকার গত ৪ বছরে রাষ্ট্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভিত্তিমূল দুর্বল করে ফেলেছে। এদের কাছ থেকে পরিত্রাণ ভিন্ন এদেশে একবিংশ শতকের উপযোগী একটি আধুনিক, গণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ফ্যাসিস্ট শাসকদের হাত থেকে পরিত্রাণের উপায় দেশের ঐক্যবদ্ধ জনগণকেই খুঁজে নিতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অথবা ভারতের মুখাপেক্ষী হয়ে আমরা প্রকৃত সার্বভৌম, জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র নির্মাণ করতে পারব না। আসুন, নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করে দুর্নীতিবাজ, অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীকে পরাজিত করার সংগ্রামে এই মহান বিজয়ের মাসে সংকল্পবদ্ধ হই। তাহলেই কেবল আমাদের হারিয়ে যাওয়া মান-মর্যাদা পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শনে সক্ষম হব।
পুনশ্চ : বিজয়ের মাসে আমাদের লড়াকু ক্রিকেটাররা দেশের মান-মর্যাদা কেবল বৃদ্ধিই করেনি, চার বছরের দুঃশাসনে ম্রিয়মাণ জাতিকে খানিকক্ষণের জন্য হলেও ঐক্যবদ্ধভাবে আনন্দের জোয়ারে অবগাহন করার সুযোগ করে দিয়েছে। তাদের আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন।
ই-মেইল : admahmudrahman@gmail.com


ছাত্রলীগের সন্দেহ-রোষে প্রাণ গেল পথচারীর

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধি | তারিখ: ০৯-১২-২০১২
  • স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ে আছে বিশ্বজিৎ দাসের নিথর লাশ। পুরান ঢাকার জজ কোর্ট
    স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পড়ে আছে বিশ্বজিৎ দাসের নিথর লাশ। পুরান ঢাকার জজ কোর্ট এলাকায় আজ সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন তিনি।
    ছবি: হাসান রাজা।
  • ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের সমর্থিত আইনজীবীদের মিছিল লক্ষ্য করে জগন্নাথ বিশ্�
    ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় বিএনপি-জামায়াতের সমর্থিত আইনজীবীদের মিছিল লক্ষ্য করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ ছাত্রলীগের ধাওয়া।
    ছবি: হাসান রাজা।
  • ধাওয়া খেয়ে একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেওয়ার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিশ্বজিৎ দাসকে কোপাচ��
    ধাওয়া খেয়ে একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেওয়ার পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে বিশ্বজিৎ দাসকে কোপাচ্ছে ছাত্রলীগের এক কর্মী।
    ছবি: হাসান রাজা।
  • বিশ্বজিৎ দাসকে কোপানো শেষে ডেন্টাল ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে আসছেন চাপাতি হাতে ছাত্রলীগের কর্মী।
    বিশ্বজিৎ দাসকে কোপানো শেষে ডেন্টাল ক্লিনিক থেকে বেরিয়ে আসছেন চাপাতি হাতে ছাত্রলীগের কর্মী।
    ছবি: হাসান রাজা।
  • ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাত বিশ্বজিকে পেটাচ্ছে ছাত্রলীগের কর্মী।
    ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাত বিশ্বজিকে পেটাচ্ছে ছাত্রলীগের কর্মী।
    ছবি: হাসান রাজা।
  • ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাত বিশ্বজিকে পেটাচ্ছে ছাত্রলীগের কর্মী।
    ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাত বিশ্বজিকে পেটাচ্ছে ছাত্রলীগের কর্মী।
    ছবি: হাসান রাজা।
  • ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন বিশ্বজিৎ।
    ছাত্রলীগের কর্মীদের হামলা থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন বিশ্বজিৎ।
    ছবি: হাসান রাজা।
  • নিহত বিশ্বজিতের স্বজনের আহাজারি।
    নিহত বিশ্বজিতের স্বজনের আহাজারি।
    ছবি: হাসান রাজা।
1 2 3 4 5 6 7 8
রাজধানীর পুরান ঢাকার জজ কোর্ট এলাকায় আজ রোববার সকালে ছাত্রদলকর্মী সন্দেহে ছাত্রলীগের কর্মীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। তাঁর নাম বিশ্বজিত্ দাস (২৪)।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ১৮ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধ কর্মসূচির সমর্থনে আজ সকাল সোয়া নয়টার দিকে ঢাকা জজ কোর্ট এলাকা থেকে বিএনপি-জামায়াতের সমর্থিত আইনজীবীরা একটি মিছিল নিয়ে ভিক্টোরিয়া পার্কের কাছে গেলে একটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এ সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আইনজীবীদের ধাওয়া করেন। ধাওয়া খেয়ে পথচারী বিশ্বজিত্ দাস দৌড়ে সেখানকার একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেন। তখন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় বিশ্বজিেক এক রিকশাচালক পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিত্সক বিশ্বজিেক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর লাশ হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আবু তানভীর সিদ্দিক বলেন, বিশ্বজিেক গুরুতর অবস্থায় এক রিকশাচালক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। প্রচুর রক্ষক্ষরণের কারণে ১০ মিনিটের মাথায় মারা যান তিনি।
নিহত ব্যক্তির বড় ভাই উত্তম কুমার দাস প্রথম আলো ডটকমকে জানিয়েছেন, ৫৩ নম্বর ঋষিকেশ দাস লেনের বাসা থেকে আজ সকালে শাঁখারীবাজারে তাঁর টেইলার্সের দোকানে যাচ্ছিলেন বিশ্বজিত্। ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় ছাত্রদলের কর্মী মনে করে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাঁকে কুপিয়েছে। বিশ্বজিত্ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন বলেও তিনি দাবি করেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করে দুপুর দুইটা পর্যন্ত পুলিশের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

About